দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রথমদিনে পাঁচটি ট্রাকে ২৭ টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে। এতে দেশের বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে দাবি আমদানি কারকদের। কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ভারত থেকে কাঁচামরিচবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বন্দর দিয়ে পুনরায় কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে আরও চার ট্রাক কাঁচামরিচ আমদানি করা হয়। সর্বমোট পাঁচটি ট্রাকে ২৭ টন ১৬ কেজি কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে। হিলি স্থলবন্দরের সততা বাণিজ্যালয় ও বগুড়ার সোনালি ফ্লাওয়ার মিল নামের দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামরিচ আমদানি করে। ভারত থেকে আমদানিকৃত কাঁচামরিচ কিছুটা ভালো মানের হওয়ায় বন্দরে পাইকারিতে ট্রাকসেল ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির খবরে হিলি বাজারে দেশি কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে যা রোববার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল।
হিলি স্থলবন্দরের কাঁচামরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বলেন, অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টির কারণে দেশি কাঁচামরিচের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। দেশের বাজারে দাম বাড়তে বাড়তে ইতোমধ্যেই ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় কাঁচামরিচের দাম। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যায় কাঁচামরিচ। এমন অবস্থায় ২৫ জুন দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি (আইপি) দিয়েছে সরকার।
ইতোমধ্যে হিলি স্থলবন্দরের কয়েকজন আমদানিকারক কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছে। আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর অনেকেই রোববার কাঁচামরিচ আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন। যার কারণে সোমবার থেকে বন্দর দিয়ে পুনরায় ভারত থেকে প্রথম কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। এতে করে দেশের বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ যেমন বাড়বে তেমনি দাম নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল সেটি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে ঈদের ছুটির কারণে সোমবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায় গাড়ি সঠিক সময়ে ঢুকতে পারবে না।
যার কারণে অল্প পরিমাণে কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে। ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। ঈদের ছুটি শেষে ৩ জুলাই থেকে পুনরায় আমদানি রপ্তানি শুরু হলে বন্দর দিয়ে কাঁচামরিচের আমদানি যেমন বাড়বে তেমনি দাম কমে আসবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ভারতের বিহার প্রদেশ থেকে এই কাঁচামরিচ দেশে আমদানি করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় ভারতের বাজারেই কাঁচামরিচের দাম এবারে খানিকটা বেশি।
বর্তমানে যে কাঁচামরিচ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে তা ১১০ রুপি করে ভারতের মোকাম থেকে ক্রয় করা হচ্ছে। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া রয়েছে তার পরে কেজি প্রতি কাঁচামরিচের আমদানি শুল্ক দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। সবমিলিয়ে কাঁচামরিচ আমদানিতে যে পড়তা পড়ছে তাতে করে খুব একটা দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ২০০ টাকার উপরেই দাম থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ঈদের পর আমদানি বাড়লে ও আমদানি শুল্ক কিছুটা কমানো হলে মানুষ কম দামে কাঁচামরিচ পাওয়া যেত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট মাহবুব আলম বলেন, বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিটন কাঁচামরিচ ২০০ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। আর আমদানিকৃত এসব কাঁচামরিচ কাস্টমসে প্রতিটন ৫০০ মার্কিন ডলার মূল্য ধরে শুল্কায়ন করে ছাড়করণ করছেন। এতে করে কেজি প্রতি কাঁচামরিচ আমদানিতে ৩৫ টাকার মত শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে আমদানির কারকদের।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, বেশ কিছুদিন বন্ধের পর রোববার টমেটো ও কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের সাতজন আমদানিকারক ২ হাজার ৯০০ টন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।
এছাড়াও একজন আমদানিকারক ৫০০ টন টমেটো আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। আমদানির অনুমতি পাওয়ায় বেশ কিছুদিন বন্ধের পর সোমবার বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। আমদানিকৃত এসব কাঁচামরিচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মান যাচাইপুর্বক সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত বছরের ২৪ আগস্ট সর্বশেষ ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছিল। আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর সোমবার দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধের পর আবারো বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে।
কাঁচামরিচ আমদানির ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণ যেমন বাড়বে, তেমনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয় বাড়বে। এছাড়া কাঁচামরিচ যেহেতু কাঁচাপণ্য গরমে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে কাস্টমসের সকল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে দ্রুততার সঙ্গে আমদানিকারকরা কাঁচামরিচ খালাস করে নিতে পারেন বন্দর কর্তৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেখেছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।